Connect with us

Highlights

স্বপ্নের প্রকল্প: চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর

Published

on

ফজলুর রহমান
‘‘কি যে এক নতুন অনুভূতি, আমার চোখে পানি চলে আসছে, খুশিতে কান্না চলে আসার মতো অবস্থা আমার”-চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর পরিদর্শন করার সময় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালনা (সচিব) জনাব হোসনে আরা বেগম, এনডিসি। ১৩ নভেম্বর সবুজ ক্যাম্পাসের উজ্বল আলোয় তিনি প্রকল্প স্থানে পা ফেলতে না ফেলতেই এমন অনুভূতির প্রকাশ ঘটান। এরপর বিশালাকার ইনকিউবেটর অবকাঠামো ঘুরে ঘুরে দেখে আরো মুগ্ধতা প্রকাশ করেন দেশের তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ে থাকা এই ডায়নামিক ব্যক্তিত্ব। চুয়েটের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমও অনেক স্বপ্নে গড়া এই প্রকল্পে পা রেখে নতুন আবেগে ভাসেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ নির্মিত হচ্ছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রথম ইনকিউবেটর–শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইকিউবেটর । যা বাস্তবায়ন হলে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতৃন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রেও নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

এবার আমরা ইনকিউবেটরের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখি।

ইনকিউবেটর কি?
ইনকিউবেটর মানে আমরা সাধারণত বুঝি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর যন্ত্র। কিন্তু এখানে না আছে ডিম না ফুটবে বাচ্চা। এইরূপ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন বা গবেষণালব্ধ ফলাফলকে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসে রূপান্তর ঘটানোর লক্ষে প্রারম্ভিক সহায়তা প্রদান করা। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

বিজনেস ইনকিউবেটর কি?
বিজনেস ইনকিউবেটর হ’ল একটি কর্মক্ষেত্র, যা একটি ছাদের নীচে সমস্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করে স্টার্টআপ/ নতুন উদ্যোগকে সহায়তা করা হয়। ডেস্ক বা অফিস ছাড়াও, ইনকিউবেটরে প্রায়শই বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা, অর্থ সহায়তা , প্রশাসনিক সহায়তা, অফিস সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের গমনাগমনসহ আবাসিক সংস্থান থাকে।

ইনকিউবেটরের ইতিহাস

ইনকিউবেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম সফলভাবে শুরু হয় সেই ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে Batavia Industrial Centre (BIC) এর মাধ্যমে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০ হাজার আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর রয়েছে। National Business Incubation Association (NBIA)-এর ২০০৫ সালের তথ্য মতে, কেবল উত্তর আমেরিকায় এসব ইনকিউবেটরের মাধ্যমে প্রায় ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ চীনে ৭০০ এর অধিক এবং ভারতে ৭০ এর অধিক ইনকিউবেটর রয়েছে।চীন ও ভারতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আইটি সেক্টরে নতুন নতুন সফল উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। এটা বলা হয় যে, ইনকিউবেটরে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ৩০ ডলার আয় করা যায়।

চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চুয়েটের স্নাতকদের দক্ষ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারদর্শী হিসেবে গড়ে তোলা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে আরো সম্মৃদ্ধ করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে বেগবান করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অধিকতর ভূমিকা রাখার নিমিত্তে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম ইনকিউবেটর শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের একটি ড্রিম প্রকল্প হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে এটার নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর ২৬তম সভায় গত ০৬ জুন, ২০১৭ খ্রি. একনেক চেয়ারম্যান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পটির অনুমোদন দেন।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় চুয়েট ক্যাম্পাসে ১০ তলা ভবনের মূল ইনকিউবেশন ভবন তৈরি হবে। যাতে গবেষণা কেন্দ্র, ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমি কোলাবরেশন জোন, আইডিয়া ডেভল্পমেন্ট জোন, ফুডকোর্ট, প্রদর্শনী কক্ষসহ আইটি কোম্পানির জন্য অত্যাধুনিক অফিস কক্ষ থাকবে। এছাড়াও একটি ৬ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবনে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি, প্রশিক্ষণ কক্ষ এবং কনফারেন্স কক্ষ থাকবে। স্টার্টআপ কোম্পানিকে আবাসিক সুবিধা প্রদানের জন্য একটি পুরুষ এবং একটি নারী ডরমিটরি তৈরি হচ্ছে। ইনকিউবেটর স্থাপন প্রকল্পের আওতায় দুইটি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো:
১। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক/ স্নাতকদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান।
২। বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইটি/ আইটিএস শিল্পের মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করা।
৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমের সংযোগ স্থাপন করা।
৪। ভৌত অবকাঠামো ও আনুসঙ্গিক সুবিধাদি তৈরি করা।

নামকরণ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদনক্রমে ‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের নাম “চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর” নামে নামকরণ করা হয়।

রক্ষণাবেক্ষণ ও জনবল: এই প্রকল্পের মাধ্যমে আহরিত সম্পদের ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এজন্য “চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাক্কালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং চুয়েট কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নান্তে আহরিত সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য জনবল, অপারেশন এবং দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে চুয়েট কর্তৃপক্ষকে বাজেট বরাদ্দের কথা রয়েছে। প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, জনবল ও পরিচালন চুয়েটের বাৎসরিক আর্থিক বরাদ্দ হতে মিটানো হবে।

পরিচালক নিয়োগ: প্রকল্পের জন্য অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার লক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো গড়ে তোলা হবে। বর্তমানে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ জহুরুল ইসলাম। ইনকিউবেট পরিচালনার জন্য চুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক, বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক-কে পরিচালক পদে সাময়িকভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সার্বিক তদারকিতে আছেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইন্টেন্যান্স) নরোত্তম পাল। এছাড়া নির্মাণ কাজ তদারকিতে আছেন চুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান।

প্রশিক্ষণ: প্রকল্পে আইটি বিষয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য অনুমোদিত ডিপিপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি গ্রাজুয়েটদের আইটি সার্ভিস প্রফেশনালে রূপান্তর করার জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। ডিপিপি’র বিবরণ অনুযায়ী চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার আইটি বিষয়ক শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল এবং এন্টারপ্রিনিউর হিসেবে গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য। ইতিমধ্যে চুয়েটের ২৫০জন শিক্ষার্থীকে বিগডাটা, এআই, সাইবার নিরাপত্তা,ডাটা এনালেটিক্স, মেশিন সার্ভিং, ব্লকচেইন বিষয়ে দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।এই কাজে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী এবং অভ্যন্তরীণ/ আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন করে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডিপিপি-তে নির্দেশনা আছে।

গবেষণা: এখানে গবেষণার ক্ষেত্রে মাস্টার্স এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।গবেষণার ফলাফল হিসেবে প্রত্যেকটি গবেষণা প্রস্তাব হতে একটি স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশনাসহ সেমিনার/ ওয়ার্কশপ করতে হবে। প্রকাশনার সময় অর্থায়নের উৎস প্রকাশনায় উল্লেখ করতে হবে এবং গবেষণা সমাপ্তিতে প্রেজেন্টেশন এবং গবেষণা সংক্রান্ত সব তথ্যাদি প্রকল্প অফিসে দাখিল করতে হবে। এরইমধ্যে ৭টি গবেষণা প্রকল্পে ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলোকে টেকসই এবং পণ্য হিসেবে রূপান্তর করার লক্ষে এগুলোকে ইনকিউবেটরে স্টার্টআপ হিসেবে গড়ে তোলাসহ অধিকতর সুবিধা প্রদান করা হবে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সফলভাবে বাস্তবায়ন ও পরিচালনার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেন্জ মোকাবেলা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই ভূমিকা রাখার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষা-গবেষণায় “Center of Excellence” হিসেবে গড়ে উঠতে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। ফোন : ০১৬৭৩৭৬৪৫৬০

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক মিলবে টেলিটক সিমে

Published

on

কোথাও টেলিটকের নেটওয়ার্ক নেই কিংবা তা দূর্বল তখন ওই এলাকায় বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কথা বলাসহ সব ধরনের মোবাইল সেবা পাবেন টেলিটক গ্রাহকরা।

আবার এই একই সুবিধা মিলবে বাংলালিংকের গ্রাহকের ক্ষেত্রেও। তারা ব্যবহার করতে পারবেন টেলিটকের নেটওয়ার্ক।‘ন্যাশনাল রোমিং’ নামে এই সেবা দেশে চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই সেবা চালুতে সম্মতি দিয়েছেন।ইতোমধ্যে বিটিআরসি এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমতি দিয়েছে।এরআগে ন্যাশনাল রোমিংয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো শেয়ারিংয়ে দুই অপারেটর নিজেদের মধ্যে চুক্তিও সেরেছে। তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করে কারিগরিসহ বিভিন্ন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে।

বিটিআরসি বলছে, ন্যাশনাল রোমিং আন্তর্জাতিক রোমিং সেবার মতোই একটি বিষয়। এতে একটি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকরা দেশের কোনো এলাকায় তাদের নেটওয়ার্ক না পেলে কিংবা নেটওয়ার্ক দূর্বল হলে আরেকটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সব রকম মোবাইল যোগাযোগ সেবা নেবেন।

বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলছেন, ‘বাংলালিংক-টেলিটক এখনও এই সেবার টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল করছে। গ্রাহকের জন্য যেটা ভালো, এরকম কিছু আমরা সবসময়ই করি। এটাই আমাদের কাজ।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অনুমতি বা লিগ্যাল দিক যেটুকু আছে, সেটুকু আমরা ওকে করে দিয়েছি। এমন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতামত নেই, তিনি আমাদের সম্মতি দিয়েছেন এটি চালু করার জন্য।’‘টেলিটকের কারিগরি কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করে তারা অপারেশনে যাবে।’ বলছিলেন মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার জানান, ‘এই ডমিস্টিক রোমিংয়ে দুই অপারেটরের উইন-উইন সিচুয়েশন হবে। যার যতটুকু নেটওয়ার্ক আছে সেই বিনিফিট তো পাবেই, যেখানে নেটওয়ার্ক নাই সেখানেই বেনিফিট পাবে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দুই অপারেটরের গ্রাহকরা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এটা টেলিটকের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা দূর্বল নেটওয়ার্কের অপারেটরকে সবল নেটওয়ার্কে পরিণত করার সুযোগ এসেছে।’বর্তমানে সাড়ে চৌদ্দ হাজারের মতো টাওয়ার আছে বাংলালিংকের। টেলিটকের আছে ৬ হাজারের মতো। এই উদ্যোগের ফলে টেলিটক বাংলালিংকের টাওয়ারগুলোর নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে সারাদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নিয়ে হাজির হতে পারবে। একইভাবে বাংলালিংকও টেলিটকের টাওয়ারে। বিশেষ করে যেখানে যেখানে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক নেই বা দূর্বল, যেমন-সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওর এলাকাগুলোতে।

যেভাবে এই নেটওয়ার্ক শেয়ারিং :হোম নেটওয়ার্ক (গ্রাহকের সিম যে অপারেটরের) না থাকলে ডমিস্টিক বা ন্যাশনাল রোমিংয়ের মাধ্যমে ওই নেটওয়ার্কের বাইরে ভিজিটিং নেটওয়ার্ক (গ্রাহক বিকল্প হিসেবে যে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে) ব্যবহার করে সংযুক্ত থাকবে গ্রাহক। এজন্য ভিজিটিং নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি, এন্টেনা, র‌্যান, কোর সুইচিং নোডসসহ নেটওয়ার্কের মূল অবকাঠামো ব্যবহার করতে হবে । এর মধ্য দিয়ে গ্রাহক নিজের সিমে নেটওয়ার্ক না থাকার পর আরেকটি অপারেটরের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে কথা বা মোবাইল সেবা নিতে পারবেন।বাংলালিংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এরজন্য তাদের প্রযুক্তিগত কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সফলতার সঙ্গেই পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করতে পারছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিটকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলছেন, তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা যাচাই-বাছাই করছেন। তবে প্রযুক্তিগত কিছু চ্যালেঞ্জ তাদের রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ টেকনোলজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির জানান, এখানে প্রযুক্তিগত তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বাড়তি হিসেবে রোমিংয়ের কিছু সফটওয়্যার প্রয়োজন হবে, যার জন্য বড় বিনিয়োগ লাগবে না।পরীক্ষামূলকে কী ঘটেছে ?দুই অপাারেটর নিজেদের মধ্যে ভয়েস কল, এসএমএস, ইউএসএসডি সেবার ইনকামিং-আউটগোয়িং পরীক্ষা করেছে। যেখানে টেলিটক নাম্বার হতে বাংলালিংক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার সফলতার হার তুলনামূলক বেশি। যেমন একটি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ;টেলিটকের নাম্বার হতে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক দিয়ে আউটগোয়িং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), আইপিটিএসপি, এমএনপি, শর্টকোড (৯৯৯, ৩৩৩, ১০৬০৬) এবং আন্তর্জাতিক নাম্বারে সফলভাবে কল করা গেছে। সেখানে শুধু বাংলালিংক রোমিং নাম্বারে একটি কল সফল হয়নি।একইভাবে আউটগোয়িং এসএমএস, ইউএসএসডির ক্ষেত্রে সব ধরণের নাম্বারেই সফল ফলাফল এসেছে।ইনকামিং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), এমএনপি এবং আন্তর্জাতিক নাম্বার হতে টেলিটক নাম্বারে আসার ক্ষেত্রে সফলতার হার কম দেখা গেছে। এতে টেলিটক, বাংলালিংক, পিএসটিএন (বিটিসিএল), এমএনপি এবং আন্তর্জাতিক নাম্বার হতে কল সফল হয়নি। এখানে এসএমএসের ক্ষেত্রে শুধু বাংলালিংকের রোমিং নাম্বারে যায়নি।বাংলালিংকের নাম্বার হতে টেলিটকের নেটওয়ার্ক দিয়ে আউটগোয়িং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), আইপিটিএসপি, এমএনপি এবং শর্টকোড (৯৯৯, ৩৩৩, ১০৬০৬) নাম্বারে সফলভাবে কল করা গেছে। সেখানে শুধু টেলিটক রোমিং নাম্বারে একটি কল সফল হয়নি।

একইভাবে আউটগোয়িং এসএমএস, ইউএসএসডির ক্ষেত্রে একটি ছাড়া সব ধরণের নাম্বারেই অসফল ফলাফল এসেছে। সফল হওয়া একটি ইউএসএসডি নাম্বার হলো *১২১* ।ইনকামিং ভয়েস কলে বাংলালিংক, টেলিটক, টেলিটক রোমিং, রবি ও জিপি নাম্বার হতে বাংলালিংক নাম্বারে আসার ক্ষেত্রে সবগুলো চেষ্টাই অসফল হয়েছে। এখানে এসএমএসের ক্ষেত্রে বাংলালিংক, টেলিটক, টেলিটক রোমিং এবং জিপি নাম্বার হতে চেষ্টা করা হলে টেলিটক রোমিংয়ে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ।

নীতিগত যা কিছু :ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিং গাইড লাইন-২০১১ এর ২.১ অনুযায়ী র‌্যান এবং কোর সুইচ শেয়ার অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার। ন্যাশনাল রোমিংয়ে দেখা যাচ্ছে অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার হচ্ছে। গাইডলাইনের ৩.১ অনুযায়ী অপারেটরগুলো শুধু প্যাসিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার করতে পারবে।বিটিআরসি বলছে, অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিংয়ের গাইডলাইনের খসড়া সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে এই অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।গ্রাহক পর্যায়ে কলরেট বা অন্য সেবার খরচ বাড়বে কিনা এমন জিজ্ঞাসায় বাংলালিংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের খরচ বাড়ুক এটা তারা চান না। দুই অপারেটর নিজেদের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের বাণিজ্যিক চুক্তি করবে, সেখানে কে কাকে কোথায় কত চার্জ সেটা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলছেন, ‘অপারেটর দুটি তাদের পরীক্ষামূলক সেবা চালুর প্রতিবেদন জমা দেয়নি। পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের দিক। এরপর আরও ওয়ার্কআউট করার রয়েছে, ট্যারিফের মতো বিষয় এখানে আছে।’

Continue Reading

Gadgets

রিয়েলমির নতুন ফোনে ২৪০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার

Published

on

চীনের হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিয়েলমি এই প্রথম ২৪০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জারের ফোন আনছে। ফোনটির মডেল রিয়েলমি জিটি ৫।

নতুন ডিভাইসকে রিয়েলমি বলছে কিং অব অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন। কেননা, সাশ্রয়ী দামের এই ফোনে থাকছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ক্যামেরা এবং বিপুল স্টোরেজ। এক ফোনেই ইউজারদের সমস্ত চাহিদা মেটাতে চলেছে রিয়েলমি। ফোনটিতে পাঞ্চ হোল ডিজাইনের ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে।

৬.৭৪ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনে ১.৫ কে রেজুলেশন মিলবে। এর অ্যামোলিড প্যানেলে ১৪৪ হার্জ রিফ্রেশ রেট পাওয়া যাবে।

এই ফোনে প্রসেসর থাকছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেনারেশন ২ চিপসেট। ইন্টারনাল স্টোরেজ থাকছে ১ টেরাবাইট। র‌্যাম মিলবে ২৪ জিবি।

অ্যানড্রয়েড ১৩ অপারেটিং সিস্টেম চালিত এই ফোন কেনা যাবে দুইটি ব্যাটারি ভার্সনে। একটি পাওয়া যাবে ৪৬০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি এবং ২৪০ ওয়াটের সুপারভোক ফাস্ট চার্জারে। অন্যটি কেনা যাবে ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি এবং ১৫০ ফাস্ট চার্জারেরর সঙ্গে। যা দুরন্ত গতিতে ব্যাটারিকে ০ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ করতে পারবে।

ফটোগ্রাফির জন্যও এতে রয়েছে বিশেষ আয়োজন, তিনটি ক্যামেরা সঙ্গে এলইডি ফ্ল্যাশ পাবেন এতে। ব্যাক প্যানেলে মূল সেন্সর হিসাবে ৫০ মেগাপিক্সেল লেন্স সঙ্গে ৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স এবং ২ মেগাপিক্সেল সেন্সর পাওয়া যাবে এতে। ফোনের ফ্রন্টে সেলফি ও ভিডিও কলের জন্য মিলবে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা।

কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে থাকছে ৫জি, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। পাওয়া যাবে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।

ভারতীয় মুদ্রায় এই হ্যান্ডসেটের সম্ভাব্য দাম ৫৩ হাজার ৫০০ রুপি থেকে শুরু।

Continue Reading

Highlights

বাংলাদেশসহ ৪ দেশে অ্যান্ড্রয়েডে চ্যাটজিপিটি

Published

on

শুধু বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে চালু হয়েছে চ্যাটজিপিটির অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন। এ চারটি দেশে বসবাস করা যে কেউ এখন থেকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে ওপেনএআই-এর আলোচিত এ সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে যেসব ব্যবহারকারীদের এতদিন কম্পিউটার কিংবা ওয়েবে যারা এ সেবাটি ব্যবহার করেছেন, একই অ্যাকাউন্ট মোবাইলেও চালু করতে পারবে। ফলে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে অতীতের সব কথোপকথনও অ্যাপের মধ্যে পাওয়া যাবে।

খবরে বলা হয়েছে, এ চারটি দেশের বাইরে অন্য কোনো দেশের মানুষ গুগল প্লে-তে গিয়ে অ্যাপটির জন্য প্রি-অর্ডার করতে পারবেন। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই খুব শিগ্গির আরও কয়েকটি দেশে এই সেবাটি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহেই একযোগে নতুন কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে কাজ করবে।

এ ছাড়া যারা আইফোন ব্যবহার করেন তাদের মোবাইলের আইওএস-এ অফিশিয়াল চ্যাটজিপিটি অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পিউটার বা ওয়েবে চ্যাটজিপিটি যেভাবে সব প্রশ্নের জবাব দেয় মোবাইলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে মোবাইলের জন্য এর আলাদা ইন্টারফেস ডিজাইন করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের যে কোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, যে কোনো বিষয়ে পরামর্শসহ এটি নানা ধরনের টিপসও দিয়ে থাকে এই সেবাটি। ২০২২ সালের নভেম্বরে এ সেবাটি চালু করা হয়।

Source : বাংলাদেশসহ ৪ দেশে অ্যান্ড্রয়েডে চ্যাটজিপিটি

 

Continue Reading

Trending