Highlights

স্মার্ট ফোন হাতছাড়া হলেই ভয়াবহ বিপদ!

Published

on

নিউজ ডেস্ক:
অ্যাপের মাধ্যমে মুছে ফেলা ডেটা পুনরুদ্ধার করে চালানো হয় প্রতারণা * নষ্ট ফোন ঠিক করতে দিলে দোকানিও রেখে দেন গোপনীয় ছবি, ফেসবুক আইডিসহ নানা তথ্য একদিন সন্ধ্যায় শহরের বাসায় ফেরার পথে গাজীপুরের কলেজ শিক্ষার্থী এক তরুণীর মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। পরে তিনি সিমকার্ডটি তুলে নেন। মাসখানেক পর এক যুবক ঐ তরুণীকে ফোন করে জানায়, তাকে ১০ হাজার টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে থাকা ছবিগুলো (স্পর্শকাতর) ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

প্রথম দফায় দেনদরবারের পর ৫ হাজার টাকা প্রতারককে বিকাশ করে পাঠিয়ে মুক্তি পেয়েছেন বলে মনে করছিলেন। কিন্তু মাস না পেরুতেই ঐ যুবক আবারও ১০ হাজার টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে তরুণী পুলিশের শরণাপন্ন হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঐ যুবককে গ্রেফতার করে। শুধু ছিনতাই হওয়া ফোন নয়, কেউ যদি পুরোনো ফোন বিক্রিও করে দেন তাহলেও বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ ফোনের মধ্যে থাকা ছবিসহ সব ফাইল রিস্টোর করা সম্ভব। ফাইলও রিস্টোর করে প্রতারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৩ বছর বয়সি এক তরুণী তার আইফোন বিক্রি করবেন।

৪০ হাজার টাকা দাম ঠিক করে রাজধানীর উত্তরায় বিক্রি করতে আসেন ফোনটি। ফোন হাতে নিয়ে বুথ থেকে টাকা তোলার কথা বলে দৌঁড়ে পালিয়ে যান এক প্রতারক। সপ্তাহ না ঘুরতেই সেই ফোনটি কেনেন উত্তরার অনিক নামের এক যুবক। আইফোন হাতে পেয়েই প্রথমেই অ্যাপসের মাধ্যমে মুছে ফেলা ছবি ও ভিডিও রিস্টোর করেন তিনি। সেখানে পেয়ে যান ঐ তরুণীর স্পর্শকাতর কিছু ছবি। পেয়ে যান ঐ তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগের উপায়ও। পরে ঐ তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন অনিক। দেরি না করে ঐ তরুণী সিআইডির সাইবার সেন্টারে যোগাযোগ করেন। সিআইডির সাইবার সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘অনিকের ফেসবুক আইডি ট্র্যাক করে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি।’

রাজধানীর গুলিস্তানের একটি মার্কেটে মোবাইল ফোন ঠিক করতে দিয়েছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে। এই সুযোগে তার মোবাইল ফোনে থাকা ছবিসহ তার ফেসবুক আইডি নিয়ে নেয় ঐ দোকানি। ফোনে ঐ তরুণীর বেশকিছু স্পর্শকাতর ছবি ছিল। ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারেও এমন কিছু কথপোকথন ছিল। যার সূত্র ধরে দোকানি ছেলেটি সরকারি কর্মকর্তার মেয়েকে ফোন করে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে। বেশ কিছু টাকাও নেয়। কিন্তু দিন দিন ঐ যুবকের চাহিদা বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়ে তরুণী তার বাবাকে পুরো বিষয়টি জানায়। তরুণীর বাবা বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটকে অবহিত করে। কয়েক দিনের মধ্যেই পুলিশ প্রতারক যুবককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাইবার অপরাধের নতুন হাতিয়ার হিসেবে সম্প্রতি যোগ হয়েছে পুরোনো ফোন। ফোন থেকে ফাইল মুছে ফেললেও তা অনেক সময় ‘রিস্টোর’ করা অর্থাৎ ফিরিয়ে আনা যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধে। সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের মোবাইল ফোনে, ফেসবুক পেজে বা সরাসরি দিনে ১ থেকে ১ হাজার ৫০০ অভিযোগ পড়ে। কিছুকিছু অভিযোগ আমরা ফোনেই সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি পরামর্শ দিয়ে পরে সেটা নিয়ে কাজ করি। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করছেন তাদের কাছে। অধিকাংশ অভিযোগই যৌন হয়রানি নিয়ে। এর মধ্যে আছে বিদ্বেষ ছড়ানো, ছবি কেটে অশালীন ছবিতে বসানো, তরুণীদের যৌন হয়রানির হুমকি, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বাজে পোস্ট, অসামাজিক আবদার ইত্যাদি। পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, গুজব ও অনলাইন পণ্য কেনা নিয়েও প্রতারণা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে নীলফামারী জেলার নিম্ন আদালতে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন এক আসামি। সিআইডি বলছে, নীলফামারীর দেবিগঞ্জ থানা সোনাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে এক তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। রংপুর কাউনিয়ায় অনার্সে অধ্যয়নরত সেই তরুণীর ফেসবুকে গিয়ে তার ছবি সংগ্রহ করে ছবির মাথা কেটে অশ্লীল ছবির সঙ্গে সংযুক্ত করেন তিনি। পরে সেই ছবি ইনবক্সে দিয়ে অসামাজিক আবদার করেন।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজে এমন অভিযোগ আসার পর প্রযুক্তির সহায়তায় ফেক আইডির আসল মালিককে খুঁজে পায় সিআইডি। পরে নীলফামারী সদর থানার পৌর মার্কেটের সামনে থেকে ছবি এডিট করার ডিভাইসসহ তাকে গ্রেফতার করে।

সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দিনে ১ থেকে ১ হাজার ৫০০ অভিযোগ আসে আমাদের কাছে। যৌন হয়রানির অভিযোগই সবচেয়ে বেশি। এমন একটি ঘটনার পেছনে আমরা দিনের পর দিন লেগে থাকি। কোনোটি এক দিনে, আবার কোনোটি বছর শেষে গিয়েও সমাধান করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version