Highlights

বাড়ছে টিকটক-ইউটিউবে ভিডিও ফাঁদ

Published

on

নিউজ ডেস্ক:
ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানি ক্রমেই বাড়ছে। তুলনামূলক নারীরা সাইবার ক্রাইমের শিকার বেশি হচ্ছেন। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেউ সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার না জানা, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং এই আইন সম্পর্কে না জানার কারণে এ ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগির সংখ্যা বাড়ছে। জীবনযাত্রার নানান ক্ষেত্রেই সাইবার প্রতারণার ভয়ংকর ছায়া পড়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় সারা বিশ্ব আধুনিকতার জোয়ারে ভেসে চললেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় কারও কারও জীবনে চূড়ান্ত অভিশাপ নেমে আসছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল দুনিয়ায় যতই পা রাখছে নিত্যনতুন একেকটি প্রতারণায় পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। অন্যদিকে চারপাশে এতসব ব্ল্যাকমেলিংয়ের খবর প্রচার সত্ত্বেও যথেষ্ট সতর্ক হচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, দীর্ঘ সময় প্রেম করার পর একসময় প্রেমিকই হয়ে যায় প্রতারক। সম্ভ্রম লুটে নেওয়ার পর বিশ্বাসঘাতকতা করে। একপর্যায়ে প্রেমিকই ব্ল্যাকমেল শুরু করে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি কিংবা নগ্ন ভিডিও আপলোড করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারণার মুখে ভুক্তভোগী কিশোরী, তরুণী কিংবা নারী বন্দী হয়ে পড়েছে নিজ ঘরেই। চার দেয়ালের দুঃসহ যন্ত্রণাময় বন্দীশালায় জীবন হয়ে পড়ে অতিষ্ঠ। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, চলে যায় চাকরি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কারও সঙ্গেই বিন্দুমাত্র যোগাযোগ থাকে না। এমনকি নিজ পরিবারের সদস্যরাও ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর জীবন্ত লাশের মতোই বেঁচে আছেন অনেকে। সবকিছুর মূলেই রয়েছে নেট প্রতারণার আগ্রাসী থাবা। সে থাবা থেকে কিশোরী স্কুলছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহবধূ পর্যন্ত কারও যেন রেহাই নেই।

সূত্র জানায়, আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার বেশ ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া নার্গিস (ছদ্মনাম)। অনলাইন ক্লাস করার সুবাদেই পাশের মহল্লার একই ক্লাসের তুষার মেহেদীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। গ্রুপ স্টাডির নামে তুষার একদিন নার্গিসকে তারই এক ফুফাতো বোনের বাসায় নিয়ে যায়। আধাঘণ্টার পড়াশোনার পর একপর্যায়ে তারা অন্তরঙ্গতায় জড়িয়ে যায়। তুষারের কলেজ পড়ুয়া বড় ভাই সিদ্দিক সেই দৃশ্য ভিডিও করেন। অন্য একদিন সিদ্দিক গোপনে রেকর্ডকৃত ভিডিও নার্গিসকে দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা চান। অন্যথায় এ ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। সেই ভিডিও পুঁজি করে নার্গিসকে ক্রমাগত ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। দলবদ্ধ নির্যাতনের কারণে নার্গিসকে একপর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। কয়েক মিনিটের ভিডিও আপলোড করা হয় ফেসবুকে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে যায় স্কুল, কলেজ, গ্রামের বাড়িঘরে। সেই থেকে নার্গিসের স্কুলে যাতায়াত বন্ধ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবকিছু থেকে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে সে। আগে নিজের মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথা হতো। দুই মাস যাবৎ তাও বন্ধ। এখন রীতিমতো মানসিক রোগী সে। তার বড় ভাই জানান, এ ভিডিওচিত্রের কারণে তার ভার্সিটি পড়ুয়া বড় বোনটিরও বিয়ে হচ্ছে না। বিয়ের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করে চলে যাওয়ার পর পাত্রপক্ষ আর কোনো যোগাযোগই করে না। এখন পুরো বাড়িটির হাসি-আনন্দ সবই বন্ধ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, টিকটক আর ইউটিউব ভিডিওর নামে, শর্টফিল্মে অভিনয়ের কথা বলে মেয়েদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা ঘটছে ঢাকায়। নেট প্রতারণাবিরোধী এতসব প্রচার, সংবাদপত্রে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশের পরও পরিস্থিতি বিন্দুমাত্র বদলায়নি। বরং অজ্ঞাত কারণে ভিডিও শুটিংয়ের কর্মকাণ্ড বাণিজ্যিক রূপ পেতে বসেছে। বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে মডেল বা শিল্পী খুঁজে নেওয়ার পদ্ধতি এখন বাতিল হয়েছে, এখন মডেলদের জোগান মেলে অনলাইন চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে। শর্টফিল্মে যে কোনো ধরনের অভিনয়ের জন্য চাহিদামাফিক মডেল সরবরাহ দেওয়া হয়, সে কার্যক্রমও চলে অনলাইনে। গত এক সপ্তাহে বারিধারা জে ব্লকের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ১১টি টিম গেছে গাজীপুরের ভাওয়ালে বিভিন্ন শ্যুটিং স্পটে, সাজেক ভ্যালিতে এবং রাঙামাটির দুটি স্থানে। একেকটি টিমে ১৫-১৬ জন মডেলের সম্পৃক্ততাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানান, এখন ড্যান্স-অভিনয় জানুক আর না জানুক কথিত শর্টফিল্ম নির্মাতারা মডেল হিসেবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদেরই অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ যেন ছায়াছবির চিত্রনাট্য! : দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে চাকরি, বিয়ের প্রলোভন, প্রেমের ফাঁদে ফেলাসহ নানা কায়দায় কিশোরী-তরুণীদের সংগ্রহ করে আনে দালালরা। তাদের মডেল বানানোর প্রলোভন দিয়ে প্রথমেই ড্যান্স ক্লাবগুলোয় নিয়ে তোলা হয়। পরে তাদের যৌন ব্যবসার পণ্য হিসেবে বিভিন্ন গেস্টহাউস ও আবাসিক হোটেলে সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো মেয়ে যৌনকর্মে রাজি না হলে নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আটকে রেখে তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করা হয়। তারপর চলে শারীরিক নির্যাতনের নানা নির্মমতা।

অনুসন্ধানকালে কয়েকজন কিশোরী-তরুণীকে যেসব কৌশলে যৌনকর্মীতে পরিণত করা হয়েছে সেসব কাহিনি যেন ছায়াছবির চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। খপ্পরে পড়েও যেসব মেয়ে যৌন বাণিজ্যের পণ্য হতে অস্বীকার করে তাদের ওপর নেমে আসে আরও বর্বরতা। ড্যান্স পার্টির অ্যারেঞ্জারদের কয়েক সদস্য মিলে তার ওপর চালায় ‘গ্যাং রেপ’। পুরো নগ্ন অবস্থায় এসব দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করা হয়। ভিডিওচিত্র তাকে দেখিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানোর হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন চলে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যে পরিচালিত পার্লার কাম ম্যাসেজ সেন্টারে একবার কর্মী হিসেবে ঢুকলে আর নিরাপদে বের হওয়ার উপায় থাকে না। সবকিছু হারানোর পরও ভবিষ্যতে আরও বিপন্ন পরিস্থিতির কথা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই দালাল চক্রের হিংস্র মানুষগুলোর কাছেই জিম্মি হয়ে পড়ে কিশোরী-বালিকারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version