Gaming

অনলাইন জুয়া: থামানো যাচ্ছে না টাকা পাচার

Published

on

টেক এক্সপ্রেস ডেস্ক:
অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপস ও সাইট ব্যবহার করে মোবাইলে জুয়া খেলা বেড়েই চলেছে। জুয়াড়িরা অনলাইনে বিভিন্ন গেমিং, বেটিং বা বাজি খেলার সাইটে জুয়ায় মেতে উঠছে। কিছুতেই তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিটকয়েন বা ডিজিটাল মুদ্রার (ক্রিপ্টোকারেন্সি) মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। অবৈধ প্রক্রিয়ায় এই ডিজিটাল মুদ্রা কেনাবেচার লেনদেনে শত শত কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

মঙ্গলবার এ চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রাজধানীর ডেমরার গলাকাটা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), মহিউদ্দিন (৩৩) ও জামাল মিয়া (২৫)। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা টাকাকে ডলারে রূপান্তর করে ‘স্কাইফেয়ার’ ও ‘বেট৩৬৫’ অ্যাপস ব্যবহার করে জুয়া খেলতেন। এভাবে অনেকেই অনলাইনে জুয়ার মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার করছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।

ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ই-মেইলে নিবন্ধনের পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অ্যাপসের স্থানীয় এজেন্টদের টাকা দেয় জুয়াড়িরা। স্থানীয় এজেন্ট তাঁর কমিশন কেটে রেখে সেই টাকা ডলারে রূপান্তর করেন। এরপর আরো কয়েক এজেন্টের হাত ঘুরে টাকা চলে যায় বিদেশে থাকা মাস্টার এজেন্টের কাছে। আর এভাবেই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে টাকা।

পুলিশ জানায়, প্রত্যেক এজেন্টের অসংখ্য সদস্য রয়েছে। তাঁরা আইপিএল, বিপিএলসহ প্রতিটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে জুয়া খেলেন। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। এর আগে গত ১৯ মে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের চার সদস্যকে আটক করে পুলিশের অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। তারা স্ট্রিমকার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুয়া খেলার অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে শত কোটি টাকা পাচার করে আসছিল। বছরে পাচারকৃত এই টাকার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা বলে জানায় এটিইউ।

এটিইউ জানায়, স্ট্রিমকার নামে অ্যাপসটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও ভিপিএনের মাধ্যমে ঠিকই ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি দেশে ব্যবহার-প্রসারে হাতেগোনা কয়েকজন জড়িত থাকলেও না বুঝে ব্যবহার করছেন লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যেখানে ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, স্ট্রিমকার অ্যাপসে গ্রুপ চ্যাট, লিপ সিং, ড্যান্স, গল্প, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন জুয়া খেলার অপশন রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের এই অ্যাপটিতে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি হচ্ছে ইউজার আইডি এবং একটি হোস্ট আইডি। ইউজাররা সাধারণত সুন্দরী মেয়েদের ও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আর হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রিটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে দুই ধরনের এজেন্সি রয়েছেÑবিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি। বিন্স এজেন্সিগুলো বিদেশি অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ইউজারদের কাছে বিক্রি করে। এই অ্যাপের ইউজাররা এই বিন্স, হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য গিফট হিসেবে প্রদান করেন। বিন্স এক ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি। দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে- বিন্স ও জেমস। প্রতি এক লাখ বিন্সের মূল্য এক হাজার আশি টাকা এবং প্রতি লাখ জেমসের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেমস। ইউজাররা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স দেন, কিন্তু এই বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেমসে পরিণত হয়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের ওপরই নির্ভর করে হোস্টদের ইনকাম। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমস যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতিদিন এবং প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়।

এসপি আসলাম বলেন, এই বিন্স এবং জেমস নামক ডিজিটাল কারেন্সিই আমেরিকান এই অ্যাপস স্ট্রিম কারের একমাত্র চালিকাশক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিগুলো সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে।

এটিইউর সাইবার অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এই অ্যাপসের ১১ জন এজেন্ট রয়েছে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল কারেন্সি কেনাবেচা করেন। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ইউজার বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং বিদেশি একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল কারেন্সি কিনছেন। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে শত কোটির বেশি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটিইউ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এসব প্রতারণা ও ডিজিটাল মুদ্রা পাচার রোধে গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version