Connect with us

Highlights

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাক যেভাবে হয়

Published

on

নিউজ ডেস্ক:
দিনটি ছিল ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সাধারন প্রিন্টার হুট করে কাজ করা বন্ধ করে দিল। কি সমস্যা হচ্ছিল সে ব্যাপারে নিয়োজিত কর্মীদের কাছে দ্রুত জানতে চাওয়া হলো এবং সমস্যাটিকে তাড়াতাড়ি নিরাময় করার ব্যাপারে বলা হল।

তবে প্রিন্টারটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া একটি সেনসিটিভ ইস্যু ছিল। কারণ এটি সরাসরি ব্যাংকের মেইন সফটওয়্যার এর সাথে লিংক করা ছিল। যেটি মূলত সারাদিনের বাসে ট্রানসেকশন এবং ট্রানস্যাকশন হিস্টরি প্রিন্ট করত। তার পাশাপাশি একটি ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করে রাখত কম্পিউটারটি।

তবে হঠাৎ করেই প্রিন্টারে এমন গোলযোগ দেখা দেওয়ার কারণে দ্রুত প্রিন্টারটি মেরামত করার জন্য লোক নিয়োগ করা হলো। তারা প্রথমেই গিয়ে বেশ বড় অংকের ৩৬ টি মানি ট্রানজেকশন লক্ষ করল। যেগুলো কিনা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল।

কিন্তু কারা এমনটা করেছে সে ব্যাপারে সঠিক ভাবে কিছু জানা যাচ্ছিল না। তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যানেজার হিসাব করে দেখলেন ট্রানজেকশন হবা টাকার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ডলারে। যেটি ছিল মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জমানো টাকার একটি বড় অংশ।

কারা ছিল এত বড় ব্যাংক ডাকাতির পেছনে এবং কিভাবেই বা তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের এত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেদ করে ব্যাংক ডাকাতি করেছিল মূলত সেই সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এত বড় ঘটনা ঘটেছিল ঠিকই। তবে এর সূত্রপাত হয়েছিল সেদিনের ৮-৯ মাস পূর্বে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে ফিলিপিনস দ্বীপপুঞ্জে আর সি বি সি ব্যাংকের একটি শাখায় চারটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়। যার মধ্যে শুধুমাত্র তারা ৫০০ ডলার জমা রাখে। এরপর তারা সেখান থেকে প্রস্থান করে। এবং পরবর্তীতে তাদের সাথে আর কখনো কারো সাক্ষাৎকার হয়নি। এ তো গেল ফিলিপিনস এর ঘটনা।

এবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশে।

২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচকে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক দিয়ে সকলের নজর কাড়ে। যে নজর রীতিমতো কাল হয়ে দাঁড়ায় ২০১৬ সালে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে জমা রাখা ছিল বাংলাদেশের জনগণের করের একটি বড় অংশ।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে অর্থাৎ ঘটনাটি ঘটার এক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসিয়াল ইমেইল এড্রেসে একটি ইমেইল পাঠানো হয়। যেটি ছিল একটি অদ্ভুত লিংক সম্পন্ন। মনের অজান্তেই বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মী সেই ইমেইলটি ওপেন করেন। এবং লিঙ্কটিতে ক্লিক করেন। লিংকটিতে ক্লিক করার পর তিনি সেখানে বিশেষ কিছু খুঁজে পান না। কিন্তু সে কর্মী জানতো না একমাস পর তার সেই ভুলের খেসারত কি পরিমাণে দিতে হবে।

কারণ সেই ইমেইলটি ওপেন করার পর একটি সফটওয়্যার আপনা আপনি সমগ্র ব্যাংকের নেটওয়ার্ক এডজাস্টার কম্পিউটারে ইনস্টল হয়ে যায়। যেটি মূলত পাঠিয়েছিল হ্যাকাররা। সফটওয়্যার টি ইন্সটল হয়ে যাবার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল যাবতীয় তথ্য গুলো আপনা-আপনি হ্যাকারদের হাতে হস্তান্তরিত হয়।

ঘটনাটি ঘটার তিন দিন পূর্বে হ্যাকাররা তাদের মূল কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ সপ্তাহের শেষ দিন। হ্যাকারদের জানা ছিল অন্য মুসলিম কান্ট্রির গুলোর মতো বাংলাদেশেও এই দিন গুলোতে ছুটি থাকবে। তবে কাজটা তেমন সহজ ছিল না। সুইফট ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রানজেকশন এর অন্যতম নির্ভরযোগ্য সংস্থা। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতই কঠোর যেটা ভাঙ্গা অসম্ভব বললেই চলে।

সে কারণে একজন হ্যাকার চাইলেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার নিজের একাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি টাকা লেনদেন করতে পারত না। কারণ সেখানে বাধা সেজে দাঁড়াতো সুইফট। এবং সে কারণে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কম্পিউটারটিকে হ্যাক করে নেয়। যাতে পরবর্তীতে মানি ট্রান্সফারের সময় সুইফট এর কাছে ধরাশায়ী না হতে হয়।

সেদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় 35 টির বেশী বিরাট অংকের মানে ট্রানজেকশন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক এ যার পরিমাণ দাঁড়ায় সবমিলিয়ে ৯৫০ মিলিয়ন বা অলমোস্ট 1 বিলিয়ন।

তবে কেন ফেডারেল ব্যাংক কে বেছে নেওয়া হলো?

কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব একটি একাউন্ট ছিল নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংকে। তারা এ কাজটি সম্পন্ন করে মাত্র ১ ঘন্টায়। পরের দিন সকালবেলা নিউমার্কেট ফেডারেল ব্যাংক বাংলাদেশের সেই বিরাট অংকের মানি ট্রানস্যাকশন গুলোকে প্রসেস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

এবার আবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশ।

সে প্রিন্টারটির কাছে প্রিন্টার টি ঠিকঠাক মত কাজ করছিল না। পরবর্তীতে জানা যায় সে প্রিন্টারটি অকেজো করে দেওয়া হয় হ্যাকারদের দ্বারা। যাতে প্রিন্টারটি দ্বারা হ্যাকারদের সম্পর্কে কোন ডকুমেন্ট প্রিন্ট না হয়। পরের দিন সকাল বেলা জানা গেল নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক থেকে শালিকা ফাউন্ডেশনে প্রায় ২০ কোটি টাকা গিয়ে জমা হয়েছে। এটা কেবল শুরু ছিল মাত্র।

ব্যাপারটি তৎক্ষণাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসে। এবং বিস্তারিত জানতে চাওয়ার জন্য তাদের কাছে একটি এপ্লিকেশন করা হয়। তবে ছুটির দিন থাকার কারণে সেই সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ট্রানজেকশন হবার সময় এমনভাবে কোডিং কি করা হয়েছিল যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একাউন্টে পৌঁছনোর পর পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্ট এ সেগুলোকে ট্রান্সফার করার জন্য বলা হয়। তবে সেটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার জন্য ট্রানস্যাকশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারন একটি ব্যাংক কখনোই কোনো ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্ট যে এত কোটি টাকা পাঠাতে পারে না। সে কারণে নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ব্যাপারটি নিয়ে খতিয়ে দেখবে বলে জানানো হয়। ফলে শালিকা ফাউন্ডেশন সহ আরো চারটি ট্রানজেকশন ব্যতীত সকল ট্রানজেকশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সব কার্যক্রম এখানেই থেমে যায়। তবে শালিকা ফাউন্ডেশনের সে টাকা গুলো গিয়ে কোথায় জমা হল?

পরবর্তীতে জানা যায়, শালিকা ফাউন্ডেশনের সেই টাকাগুলো গিয়ে জমা হয় ফিলিপিন্সের সেই চারটি ইন্ডিভিজুয়াল ব্যাংক একাউন্টে। তবে হুট করে এত এমাউন্টের টাকা আরসিপিসি ব্যাংকে গিয়ে জমা হবার ঘটনাটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চোখেও পড়ে। কিন্তু তারা ব্যাপারটিকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি এবং অবজ্ঞার সাথে উড়িয়ে দেয়। অতঃপর সেখান থেকে টাকা গুলো বিভিন্ন ক্যাসিনোতে চলে যায়। পরবর্তীতে সেগুলোও ইলেকট্রিক মানি ট্রানজেকশন এর মাধ্যমে অন্য কোথাও হস্তান্তর হয়ে যায়। এত ঘটনার পেছনে কারা ছিল প্রায় ধরতে গেলে প্রায় অসম্ভব। কারণ একটি বড় অঙ্কের টাকা খণ্ড খণ্ড ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে আরসিবিসি ব্যাংকের নিকট মানি ট্রানজেকশন বন্ধ করার একটি নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তা দেখতে দেরি করে ফেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কারণ সোমবার দিনটি ছিল চাইনিজ নিউ ইয়ার। হ্যাকাররা একদম নিখুঁত ভাবে ছক কষে সব কার্যকলাপ পরিচালনা করে। যাতে তাদের কাজের মধ্য বিন্দুমাত্র কোন ভুল না থাকে। একদম দিন-তারিখ কোষে পরিকল্পনাটি করা হয়।

এখন ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, সেই চারটি অ্যাকাউন্ট খুলে ছিল ডিং এবং গাও নামের দুইজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ইনভেস্টিগেশন এর জন্য তাদেরকে ধরতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। কারণ ইতিমধ্যে তারা চীনের স্পেশাল রিজিওনাল শহর ম্যাকাও তে চলে যায়। সুতরাং সেখানে তাদের নাগাল পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব এবং সে কারণে এই ব্যাংক চুরিটি ইতিহাসের পাতায় অন্যতম বড় এমাউন্টের ভার্চুয়াল ডাকাতি হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিন্টার থেকে সকল তথ্য মুছে দেওয়া হলেও সাইবার এক্সপার্টরা কিছু তথ্য খুঁজে বের করেন। জানতে পারা যায়, এই হ্যাকার কমিউনিটি দেশের বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন থেকে টাকা লোপাট করে। তবে তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চোখে ধরে গিয়েছিল হ্যাকারদের। এই হ্যাকার কমিউনিটিকে লাজারাস বলে নামকরণ করা হয়েছিল। যারা সারা পৃথিবীতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে জানতে পারা যায় সেই হ্যাকার কমিউনিটিকে তাদের কার্যক্রম চালানোর পর একবার হলেও উত্তর কোরিয়ার আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছে এবং কম্পিউটারে কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ পাওয়া গিয়েছে প্রথম দিকে। সাইবার এক্সপার্টরা মনে করেছিল তদন্তকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নর্থকোরিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে পরবর্তীতে সকলেই বুঝতে পারে ব্যাপারটির সাথে নর্থ করিয়া পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। কারণ ব্যাংক লোপাটের ঘটনা নর্থ কোরিয়ার মাধ্যমে এর পূর্বেও ঘটেছে। তাদের ক্রাইম হিস্ট্রি ঘাটলে ব্যাপার গুলো বেরিয়ে আসে।

এবং এ কাজের জন্য নর্থ কোরিয়া চায়নাকে একটি বড়সড় গেজেট হিসেবে ব্যবহার করে। জে দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ম্যাকাওতে অবস্থান করছে তাদের জন্য মানি ট্রানজেকশন করাটা কোনো ব্যাপার ছিল না। কারণ অধিকাংশ সময় নর্থ কোরিয়া চীনের ব্যাংক কর্মকর্তাদের মিডল ম্যান হিসেবে ব্যবহার করে। যার ফলে বর্তমানে নর্থ কোরিয়ার কোষাগার এবং অস্ত্র ভান্ডার ফুলেফেঁপে উঠছে দিনকে দিন। সুতরাং এখন সরাসরি একনায়কতন্ত্রের দেশ নর্থ কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে দায়ী করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

অথচ হিস্টরি ঘাটলে জানা যাবে, যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত বড় কারচুপি করা হয়েছে সে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নর্থ কোরিয়া এখনো ১০০ কোটি টাকা ঋণি, যে টাকার হদিস এখনো বাংলাদেশকে দিতে পারেনি নর্থ কোরিয়া। সূত্র : টেকজুম.টিভি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক মিলবে টেলিটক সিমে

Published

on

কোথাও টেলিটকের নেটওয়ার্ক নেই কিংবা তা দূর্বল তখন ওই এলাকায় বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কথা বলাসহ সব ধরনের মোবাইল সেবা পাবেন টেলিটক গ্রাহকরা।

আবার এই একই সুবিধা মিলবে বাংলালিংকের গ্রাহকের ক্ষেত্রেও। তারা ব্যবহার করতে পারবেন টেলিটকের নেটওয়ার্ক।‘ন্যাশনাল রোমিং’ নামে এই সেবা দেশে চালু করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই সেবা চালুতে সম্মতি দিয়েছেন।ইতোমধ্যে বিটিআরসি এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমতি দিয়েছে।এরআগে ন্যাশনাল রোমিংয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো শেয়ারিংয়ে দুই অপারেটর নিজেদের মধ্যে চুক্তিও সেরেছে। তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করে কারিগরিসহ বিভিন্ন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে।

বিটিআরসি বলছে, ন্যাশনাল রোমিং আন্তর্জাতিক রোমিং সেবার মতোই একটি বিষয়। এতে একটি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকরা দেশের কোনো এলাকায় তাদের নেটওয়ার্ক না পেলে কিংবা নেটওয়ার্ক দূর্বল হলে আরেকটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সব রকম মোবাইল যোগাযোগ সেবা নেবেন।

বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলছেন, ‘বাংলালিংক-টেলিটক এখনও এই সেবার টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল করছে। গ্রাহকের জন্য যেটা ভালো, এরকম কিছু আমরা সবসময়ই করি। এটাই আমাদের কাজ।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অনুমতি বা লিগ্যাল দিক যেটুকু আছে, সেটুকু আমরা ওকে করে দিয়েছি। এমন বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতামত নেই, তিনি আমাদের সম্মতি দিয়েছেন এটি চালু করার জন্য।’‘টেলিটকের কারিগরি কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করে তারা অপারেশনে যাবে।’ বলছিলেন মন্ত্রী।

মোস্তাফা জব্বার জানান, ‘এই ডমিস্টিক রোমিংয়ে দুই অপারেটরের উইন-উইন সিচুয়েশন হবে। যার যতটুকু নেটওয়ার্ক আছে সেই বিনিফিট তো পাবেই, যেখানে নেটওয়ার্ক নাই সেখানেই বেনিফিট পাবে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দুই অপারেটরের গ্রাহকরা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এটা টেলিটকের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা দূর্বল নেটওয়ার্কের অপারেটরকে সবল নেটওয়ার্কে পরিণত করার সুযোগ এসেছে।’বর্তমানে সাড়ে চৌদ্দ হাজারের মতো টাওয়ার আছে বাংলালিংকের। টেলিটকের আছে ৬ হাজারের মতো। এই উদ্যোগের ফলে টেলিটক বাংলালিংকের টাওয়ারগুলোর নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে সারাদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নিয়ে হাজির হতে পারবে। একইভাবে বাংলালিংকও টেলিটকের টাওয়ারে। বিশেষ করে যেখানে যেখানে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক নেই বা দূর্বল, যেমন-সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওর এলাকাগুলোতে।

যেভাবে এই নেটওয়ার্ক শেয়ারিং :হোম নেটওয়ার্ক (গ্রাহকের সিম যে অপারেটরের) না থাকলে ডমিস্টিক বা ন্যাশনাল রোমিংয়ের মাধ্যমে ওই নেটওয়ার্কের বাইরে ভিজিটিং নেটওয়ার্ক (গ্রাহক বিকল্প হিসেবে যে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে) ব্যবহার করে সংযুক্ত থাকবে গ্রাহক। এজন্য ভিজিটিং নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি, এন্টেনা, র‌্যান, কোর সুইচিং নোডসসহ নেটওয়ার্কের মূল অবকাঠামো ব্যবহার করতে হবে । এর মধ্য দিয়ে গ্রাহক নিজের সিমে নেটওয়ার্ক না থাকার পর আরেকটি অপারেটরের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে কথা বা মোবাইল সেবা নিতে পারবেন।বাংলালিংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এরজন্য তাদের প্রযুক্তিগত কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সফলতার সঙ্গেই পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করতে পারছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেলিটকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলছেন, তারা পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা যাচাই-বাছাই করছেন। তবে প্রযুক্তিগত কিছু চ্যালেঞ্জ তাদের রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ টেকনোলজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির জানান, এখানে প্রযুক্তিগত তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বাড়তি হিসেবে রোমিংয়ের কিছু সফটওয়্যার প্রয়োজন হবে, যার জন্য বড় বিনিয়োগ লাগবে না।পরীক্ষামূলকে কী ঘটেছে ?দুই অপাারেটর নিজেদের মধ্যে ভয়েস কল, এসএমএস, ইউএসএসডি সেবার ইনকামিং-আউটগোয়িং পরীক্ষা করেছে। যেখানে টেলিটক নাম্বার হতে বাংলালিংক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার সফলতার হার তুলনামূলক বেশি। যেমন একটি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ;টেলিটকের নাম্বার হতে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক দিয়ে আউটগোয়িং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), আইপিটিএসপি, এমএনপি, শর্টকোড (৯৯৯, ৩৩৩, ১০৬০৬) এবং আন্তর্জাতিক নাম্বারে সফলভাবে কল করা গেছে। সেখানে শুধু বাংলালিংক রোমিং নাম্বারে একটি কল সফল হয়নি।একইভাবে আউটগোয়িং এসএমএস, ইউএসএসডির ক্ষেত্রে সব ধরণের নাম্বারেই সফল ফলাফল এসেছে।ইনকামিং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), এমএনপি এবং আন্তর্জাতিক নাম্বার হতে টেলিটক নাম্বারে আসার ক্ষেত্রে সফলতার হার কম দেখা গেছে। এতে টেলিটক, বাংলালিংক, পিএসটিএন (বিটিসিএল), এমএনপি এবং আন্তর্জাতিক নাম্বার হতে কল সফল হয়নি। এখানে এসএমএসের ক্ষেত্রে শুধু বাংলালিংকের রোমিং নাম্বারে যায়নি।বাংলালিংকের নাম্বার হতে টেলিটকের নেটওয়ার্ক দিয়ে আউটগোয়িং ভয়েস কলে বাংলালিংক, রবি, জিপি, পিএসটিএন (বিটিসিএল), আইপিটিএসপি, এমএনপি এবং শর্টকোড (৯৯৯, ৩৩৩, ১০৬০৬) নাম্বারে সফলভাবে কল করা গেছে। সেখানে শুধু টেলিটক রোমিং নাম্বারে একটি কল সফল হয়নি।

একইভাবে আউটগোয়িং এসএমএস, ইউএসএসডির ক্ষেত্রে একটি ছাড়া সব ধরণের নাম্বারেই অসফল ফলাফল এসেছে। সফল হওয়া একটি ইউএসএসডি নাম্বার হলো *১২১* ।ইনকামিং ভয়েস কলে বাংলালিংক, টেলিটক, টেলিটক রোমিং, রবি ও জিপি নাম্বার হতে বাংলালিংক নাম্বারে আসার ক্ষেত্রে সবগুলো চেষ্টাই অসফল হয়েছে। এখানে এসএমএসের ক্ষেত্রে বাংলালিংক, টেলিটক, টেলিটক রোমিং এবং জিপি নাম্বার হতে চেষ্টা করা হলে টেলিটক রোমিংয়ে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ।

নীতিগত যা কিছু :ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিং গাইড লাইন-২০১১ এর ২.১ অনুযায়ী র‌্যান এবং কোর সুইচ শেয়ার অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার। ন্যাশনাল রোমিংয়ে দেখা যাচ্ছে অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার হচ্ছে। গাইডলাইনের ৩.১ অনুযায়ী অপারেটরগুলো শুধু প্যাসিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ার করতে পারবে।বিটিআরসি বলছে, অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারিংয়ের গাইডলাইনের খসড়া সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেখানে এই অ্যাক্টিভ ইনফ্রাস্টাকচার শেয়ারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।গ্রাহক পর্যায়ে কলরেট বা অন্য সেবার খরচ বাড়বে কিনা এমন জিজ্ঞাসায় বাংলালিংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের খরচ বাড়ুক এটা তারা চান না। দুই অপারেটর নিজেদের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের বাণিজ্যিক চুক্তি করবে, সেখানে কে কাকে কোথায় কত চার্জ সেটা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলছেন, ‘অপারেটর দুটি তাদের পরীক্ষামূলক সেবা চালুর প্রতিবেদন জমা দেয়নি। পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের দিক। এরপর আরও ওয়ার্কআউট করার রয়েছে, ট্যারিফের মতো বিষয় এখানে আছে।’

Continue Reading

Gadgets

রিয়েলমির নতুন ফোনে ২৪০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার

Published

on

চীনের হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিয়েলমি এই প্রথম ২৪০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জারের ফোন আনছে। ফোনটির মডেল রিয়েলমি জিটি ৫।

নতুন ডিভাইসকে রিয়েলমি বলছে কিং অব অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন। কেননা, সাশ্রয়ী দামের এই ফোনে থাকছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ক্যামেরা এবং বিপুল স্টোরেজ। এক ফোনেই ইউজারদের সমস্ত চাহিদা মেটাতে চলেছে রিয়েলমি। ফোনটিতে পাঞ্চ হোল ডিজাইনের ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে।

৬.৭৪ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনে ১.৫ কে রেজুলেশন মিলবে। এর অ্যামোলিড প্যানেলে ১৪৪ হার্জ রিফ্রেশ রেট পাওয়া যাবে।

এই ফোনে প্রসেসর থাকছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেনারেশন ২ চিপসেট। ইন্টারনাল স্টোরেজ থাকছে ১ টেরাবাইট। র‌্যাম মিলবে ২৪ জিবি।

অ্যানড্রয়েড ১৩ অপারেটিং সিস্টেম চালিত এই ফোন কেনা যাবে দুইটি ব্যাটারি ভার্সনে। একটি পাওয়া যাবে ৪৬০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি এবং ২৪০ ওয়াটের সুপারভোক ফাস্ট চার্জারে। অন্যটি কেনা যাবে ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি এবং ১৫০ ফাস্ট চার্জারেরর সঙ্গে। যা দুরন্ত গতিতে ব্যাটারিকে ০ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ করতে পারবে।

ফটোগ্রাফির জন্যও এতে রয়েছে বিশেষ আয়োজন, তিনটি ক্যামেরা সঙ্গে এলইডি ফ্ল্যাশ পাবেন এতে। ব্যাক প্যানেলে মূল সেন্সর হিসাবে ৫০ মেগাপিক্সেল লেন্স সঙ্গে ৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স এবং ২ মেগাপিক্সেল সেন্সর পাওয়া যাবে এতে। ফোনের ফ্রন্টে সেলফি ও ভিডিও কলের জন্য মিলবে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা।

কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে থাকছে ৫জি, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। পাওয়া যাবে ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।

ভারতীয় মুদ্রায় এই হ্যান্ডসেটের সম্ভাব্য দাম ৫৩ হাজার ৫০০ রুপি থেকে শুরু।

Continue Reading

Highlights

বাংলাদেশসহ ৪ দেশে অ্যান্ড্রয়েডে চ্যাটজিপিটি

Published

on

শুধু বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে চালু হয়েছে চ্যাটজিপিটির অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন। এ চারটি দেশে বসবাস করা যে কেউ এখন থেকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে ওপেনএআই-এর আলোচিত এ সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে যেসব ব্যবহারকারীদের এতদিন কম্পিউটার কিংবা ওয়েবে যারা এ সেবাটি ব্যবহার করেছেন, একই অ্যাকাউন্ট মোবাইলেও চালু করতে পারবে। ফলে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে অতীতের সব কথোপকথনও অ্যাপের মধ্যে পাওয়া যাবে।

খবরে বলা হয়েছে, এ চারটি দেশের বাইরে অন্য কোনো দেশের মানুষ গুগল প্লে-তে গিয়ে অ্যাপটির জন্য প্রি-অর্ডার করতে পারবেন। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই খুব শিগ্গির আরও কয়েকটি দেশে এই সেবাটি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহেই একযোগে নতুন কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে কাজ করবে।

এ ছাড়া যারা আইফোন ব্যবহার করেন তাদের মোবাইলের আইওএস-এ অফিশিয়াল চ্যাটজিপিটি অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পিউটার বা ওয়েবে চ্যাটজিপিটি যেভাবে সব প্রশ্নের জবাব দেয় মোবাইলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে মোবাইলের জন্য এর আলাদা ইন্টারফেস ডিজাইন করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের যে কোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, যে কোনো বিষয়ে পরামর্শসহ এটি নানা ধরনের টিপসও দিয়ে থাকে এই সেবাটি। ২০২২ সালের নভেম্বরে এ সেবাটি চালু করা হয়।

Source : বাংলাদেশসহ ৪ দেশে অ্যান্ড্রয়েডে চ্যাটজিপিটি

 

Continue Reading

Trending