Tech News

লালমনিরহাটে কার্বন ডাই অক্সাইডে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চান শফিকুল যা চলবে তার বিহীন

Published

on

লালমনিরহাট: কার্বন ডাই অক্সাইডের মাধ্যমে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারি অনুমোদন চান লালমনিরহাটের নব্য বিজ্ঞানী খ্যাত শফিকুল ইসলাম (৩০)। 

এর অনুমোদন ও সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন তিনি।

নব্য বিজ্ঞানী খ্যাত শফিকুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ বাজার এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। পেশায় একজন বৈদ্যুতিক পণ্য বিক্রেতা।

শফিকুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের এ যুগে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস করা বিশ্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নয়তো আগামী প্রজন্মের কাছে উপকূলীয় দেশগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে এটির ব্যবহার বাড়ানো খুবই জরুরি। তাই কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি গ্যাস ও পেট্রোল উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তিনি। স্বল্প খরচে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম তার এ উদ্ভাবন। মাত্র ১০ লাখ টাকার কাঁচামালে ১৫ দিন প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হবে পানি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বায়োমিক গ্যাস, জেল ও জেলি। এসব কাঁচামালের সংমিশ্রনে তৈরি বায়োমিক বিদ্যুৎ চুল্লিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন তিনি। প্রথম ভাগে সংঘর্ষ, শব্দ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। দ্বিতীয় ভাগে কার্বোহাইড্রেড ও বায়োহাইড্রেড পুড়ে তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। চুল্লি থেকে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে বের হবে অক্সিজেন ও পানি। এভাবে পৃথিবীতে কার্বনের পরিমাণ হ্রাস করে অক্সিজের পরিমাণ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি গ্যাস ও পেট্রোল উৎপন্ন করা তার মূল লক্ষ্য। এ কারণে এ চুল্লি পরিবেশ বান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্ভাবন বলেও মনে করেন এ নব্য বিজ্ঞানী। 

কয়েকটি প্রক্রিয়ায় এসব কাঁচামাল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি এ বায়োকেমিক বিদ্যুৎ চুল্লির ল্যাব থেকে চারদিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় বজ্রাপাতকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম বলেও দাবি শফিকুলের। এ ল্যাব স্থাপনে খরচ পড়বে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ ল্যাবে ১০ লাখ টাকার কাঁচামাল পুড়িয়ে টানা ১৫ দিন প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৯০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যাবে। 

পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে খুব বেশি লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় হাজিগঞ্জ উদিয়মান সুরুজ টেকনিক্যাল কলেজ থেকে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন শফিকুল ইসলাম। টেকনিক্যাল কলেজ পড়ার সময় থেকে দীর্ঘ ১০ বছর গবেষণা করে এ উদ্ভাবনটি করতে সক্ষম হন তিনি। এখন অপেক্ষা শুধু রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও সার্বিক সহযোগিতা। যা পেলে স্বল্প দিনের মধ্যে বিশ্বকে চমক দেবেন গ্রামীণ এ বিজ্ঞানী। আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য রসায়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ চেয়েছেন শফিকুল ইসলাম। 

বিশ্বকে চমক দিতে তার উদ্ভাবনকে বাস্তবায়ন করতে সরকারি অনুমোদনসহ সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন শফিকুল ইসলাম। যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন এ উদ্ভাবন নিয়ে রসায়নবিদকে দিয়ে সাময়িক পরীক্ষা করে সফল হয়েছেন। জেলা প্রশাসন এ উদ্ভাবনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শফিকুলকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন শফিকুল ইসলাম। 

শফিকুল ইসলাম বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পৃথিবীকে প্রাণীর বাসযোগ্য করতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো। এ উদ্ভাবন ব্যবহার হলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা নিয়ে বিশ্ববাসীর যে দুঃচিন্তা তা চিরবিদায় নেবে। সেই সঙ্গে উৎপন্ন হবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। এ জন্য সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

হাজিগঞ্জ এলাকার স্কুলশিক্ষক বাদশা আলম জানান, দীর্ঘদিন গবেষণা করে বায়োকেমিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনের পন্থা উদ্ভাবন করে নব বিজ্ঞানী নামে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন শফিকুল ইসলাম। গাছপালা নিধনের ফলে বিশ্বে কার্বনের পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে তাতে এ উদ্ভাবন দ্রুত বাস্তবায়ন করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করা উচিত। বিশ্বের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে এ উদ্ভাবন দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, উদ্ভাবনটি বাস্তবায়ন করতে সরকারি অনুমোদন ও সার্বিক সহায়তা চেয়ে করা আবেদনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিলে দ্রুত এটি সরকারি উচ্চমহলের মতামত চাওয়া হবে। 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version