Tech News

বাবরি মসজিদ: ফেসবুকে ভাইরাল একটি বক্তব্য নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সম্প্রতি ভারতের আদালত বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে। সেই সাথে মুসলমানদেরকে মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্য কোনো স্থানে একটি জমি বরাদ্দেরও নির্দেশ দেয় আদালত। মামলার রায়ের পর বিষয়টি নিয়ে ভারতের মুসলিমদের মধ্যে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে সমালোচনা চলছে।

এদিকে ফেসবুকে গত দুইদিনে বাবরি মসজিদ নিয়ে একটি ভিডিও বক্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের হেযবুত তওহীদ নামে একটি সংগঠনের নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। ২৪ মিনিটের ওই বক্তব্যে তিনি বাবরি মসজিদ কিছু যৌক্তিক কথা বলেছেন। যা নিয়ে ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ভিডিওটি গত ১৯ নভেম্বর পোস্ট করা হয়েছে। গত দুই দিনে ভিডিওটি দেখা হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখেরও বেশি। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার। ভিডিওটিতে মন্তব্য পরেছে ১৫ হাজারেরও বেশি। আর রিয়েকশন দিয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি।

বক্তব্যে হেযবুত তওহীদদের এই নেতা মুসলমানদের অতীত, বর্তমান পরিস্থিতি, বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে বাবরি মসজিদ নিয়ে যৌক্তিক বক্তব্য তুলে ধরেন। আর ওই রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন: এটা একটা ইস্যু সৃষ্টি করে দেওয়া হলো আরকি। গোটা ভারতে আর কোনো জায়গা ছিলো না মসজিদ বানানোর। সেখানেই খুঁজে দেখতে হবে, আগে কি ছিলো, মন্দির ছিলো কিনা? সেখানেই একটা মন্দির বানাতে হবে। হিন্দুত্ববাদীরা মনে করবে আমাদের ধর্মের বুঝি খুব উপকার হয়ে গেল।

ভিডিওটির ভাষ্যমতে- ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, উজবেকিস্তান, আজারবাইজান, তাজাকিস্তান, চেচনিয়া, বসনিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে হাজার-হাজার মসজিদ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে- আমরা যেখানে লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জত রক্ষা করতে পারছিনা, সেখানে বাবরি মসজিদ নিয়ে মায়াকান্না করাটা অযৌক্তিক। শুধু তাই নয়, সৌদি আরবের হামলায় ইয়েমেনের শত শত মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে। শিয়াদের হামলায় সুন্নিদের শত শত মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে। সুন্নিদের হামলায় শিয়াদের শত শত মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে। বরং মুসলমানদের উচিৎ নিজেদের মধ্যে সমস্ত অনৈক্য-ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তিনি সব মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তার বক্তব্যে।

বক্তব্যটি নিয়ে ফেসবুক কমেন্টেস-এ এইচ.এম. উজ্জ্বল হোসাইন নামে একজন লিখেছেন: “বাবরি মসজিদ নিয়ে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা খুবই যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য! কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি অনেকেই আপনার এই বক্তব্য না শুনে গালিগালাজ করছে! তারা আসলে সবাই কেই গালিগালাজ করে এটা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য! তাদেরই উগ্র চরিত্রের কারণে তারা পৃথিবীব্যাপী মার খাচ্ছে তবুও তাদের হুশ হচ্ছে না!”

হোসেন মুবারক আজাদ নামে একজন লিখেছেন: “আপনার এই পোস্টে দেখলাম অনেকেই কমেন্টে গালাগালি করছে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও গালাগালির কারণ খুজে পেলাম না। দুটি কারণে আপনাকে গালাগালি করতে পারে। হয় আপনার পুরো বক্তব্য শুনেনি। নতুবা ভিন্ন আদর্শের দরুণ। প্রশ্ন হলো, ভিন্ন আদর্শ হলেই গালাগালি করতে হবে? এটা কোন্ ধরণের শিক্ষা? আর যারা ধর্মান্ধ তাদেরকে হিসাবে নাইবা আনলাম। ধন্যবাদ আপনাকে!”

জিসান রাজা বলেছেন: “আপনার এই বক্তব্য সারা ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখবে ইনশা’আল্লাহ। কাজেই অজ্ঞ, মূর্খ, জাহেল কিছু লোকের গালাগালি দেখে হতবাক হবেন না, নিরাশ হবেন না। এরা শুধু আপনাকে নয়, কাউকেই গালি দিতে ছাড়েনি। গালি হলো তাদের স্বাভাবিক ভাষা। এদের কাছে যুক্তি নাই, তথ্য নাই, আদর্শ নাই।”

বিশ্বজিৎ পান্ডে নামে একজন লিখেছেন: “চরম কথা বলছেন ভাই।।।এই কথা বোঝার ক্ষমতা সবার নাই।।।যারা নাস্তিক বলে তারাতো বুঝবেই না।।।পারবে শুধু পরপারের সুখের লাভের কথা ভেবে 18 বছরে জিবনডা দিতে ।।। আর ফেসবুকে লাফাইতে পারবে।।।আর কিছু পারবে না।।।”

গাজী হাবিব বলেছেন: “এ বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক দিন ভাবছি আর আপনার কাছ থেকে এ বিষয়ের ওপর একটি সুন্দর বক্তব্য শুনলাম ধন্যবাদ আপনাকে আল্লাহ আপনার সহায় হোক.”

এসব কমেন্টের বাইরে যৌক্তিক বিরোধিতা করতে তেমন কাউকে দেখা না গেলেও অনেককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে দেখা গেছে। বেশ কিছু লোক কমেন্টে লিখেছেন: “এই পোস্টে অনেকেই গালাগালি করছে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও গালাগালির কারণ খুজে পেলাম না। দুটি কারণে আপনাকে গালাগালি করতে পারে। হয় আপনার পুরো বক্তব্য শুনেনি। নতুবা ভিন্ন আদর্শের দরুণ।” অবশ্য অনেকে ভিডিওটি পুনঃরায় দেখার পরামর্শ দিয়েছেন কমেন্টেস -এ।

প্রসঙ্গত ১৯৯২ সনের ৬ ডিসেম্বর কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতে ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। সম্প্রতি ভারতের আদালত বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণের রায় দিয়েছে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দল বিক্ষোভ, আন্দোলন, লং মার্চ ইত্যাদির ঘোষণা দিচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে হেযবুত তওহীদের বক্তব্য কিংবা কর্মসূচি কী তা জানতে চেয়েছিলেন এক প্রশ্নকর্তা। এরই জবাব দেন হেযবুত তওহীদের নেতা।

Trending

Exit mobile version