টেক এক্সপ্রেস ডেস্ক:
গত পাঁচ বছর ধরে চলা ফেইসবুকের আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ফ্রি ইন্টারনেট প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোবাইল অপারেটর রবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেইসবুকের এই ইন্টারনেট ডটওআরজি প্রকল্প ২০১৫ সালের মে মাসে বেশ জাঁকজমকভাবেই চালু হয়েছিলো। এতে ইন্টারনেট ডটওআরজিতে প্রবেশ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা, আবহাওয়া, সংবাদ, সরকারি সেবা সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট বিনা ডেটা মূল্যে পাওয়া যেতো।
গত মঙ্গলবার বিটিআরসির পাঠানো এক চিঠির প্রেক্ষিতে এই প্রকল্প বন্ধ করে দেয় রবি। চিঠিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত সেবা ফ্রি বা বিনামূল্যে প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। যেখানে কারণ হিসেবে বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার অপারেটরগুলো নিজেদের বিভিন্ন ফ্রি ফেইসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার প্যাকেজ বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যে বন্ধ হয়ে যায় এই ফ্রি ইন্টারনেট সেবাও। ফ্রি ইন্টারনেটের এই প্রকল্প ফেইসবুকের বলে সেটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে রবির।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ফেইসবুক সংক্রান্ত যাবতীয় ফ্রি অফার বন্ধে যে নির্দেশনা বিটিআরসি দিয়েছে সেটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের নির্দেশনা অনুসারে, একটি কোম্পানির ‘প্রমোশনাল’ ব্যয়ের পরিমাণ তার মোট আয়ের ০.৫% এর বেশি হতে পারবে না। এই নির্দেশনা অনুসারে ফ্রি অফারকেন্দ্রিক কোনো ব্যয় নির্বাহ করা রবির মতো কোম্পানির জন্য স্বাভাবিকভাবেই কঠিন।চালু পর বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল প্রকল্পটি।
যেখানে চালুর মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যে ২০১৫ সালের ১৯ মে রবির সেই সময়ের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিএফও) যিনি বর্তমানে সিইও এবং এমডি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, এই সেবায় রবিকে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন, বিনামূল্যের এই ইন্টারনেট সেবা হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিতদের ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসার এক উদ্যোগ। এখানে বিনোদন মুখ্য নয়, বরং প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া এবং মানুষকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রাখাটাই মুখ্য। সেই সময় সেবাটি যাত্রার মাত্র ৯ দিনে ১২ লাখ গ্রাহক ৪৩ লাখ বার এ সেবা নিয়েছিলেন। এ জন্য রবির দৈনিক ৯০ টেরাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছিল। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে এই সেবা গ্রহীতার সংখ্যা কতো দাঁড়িয়েছে আর রবির কতো টাকা ও ডেটা খরচ করতে হচ্ছিল তা জানা যায়নি। তবে এই সংখ্যাটি যে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে তা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৫ সালের ১০ মে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইন্টারনেট ডটওআরজির উদ্বোধন করেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্লোবাল অপারেটিং পার্টনারশিপ অব ইন্টারনেট ডটওআরজির তখনকার ডিরেক্টর মার্ককু ম্যাকলেইনেন্টো।
ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বাংলাদেশে এ প্রকল্প চালু উপলক্ষ্যে বিশেষ পোস্ট দিয়েছিলেন। যেখানে ইন্টারনেট ডটঅর্গের আওতায় বাংলাদেশের এক কোটির বেশি এবং বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষকে সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। ওই পোস্টে বাংলাদেশে বিনামূল্যের ইন্টারনেটের এ সেবা ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। জাকারবার্গ তার পোস্টের শেষে হ্যাসট্যাগ হিসাবে কানেক্টবাংলাদেশ ও কানেক্টওয়ার্ল্ড ব্যবহার করেছিলেন।