নিউজ ডেস্ক:
ফেসবুকের কল্যাণে নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ বছর পর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কবসা (বাঘের টিলা) এলাকার হাবিবুর রহমানকে ফিরে পেলেন তার সন্তানরা। চার যুগ আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। গত শুক্রবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের বেডে তাকে শনাক্ত করেন সন্তানরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হারিয়ে যাওয়ার পর হাবিবুর রহমান
বিভিন্ন মাজারে ঘুমাতেন। এক পর্যায়ে তিনি মৌলভীবাজারের হযরত শাহাব উদ্দিনের মাজারে থাকা শুরু করেন। সেখানেই পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের রায়শ্রী এলাকার রাজিয়া বেগমের সঙ্গে। রাজিয়া বেগমও মাজার খুব পছন্দ করতেন। সেই থেকেই তিনি হাবিবুর রহমানের দেখাশোনা করতেন।
প্রথমে হাবিবুর রহমান চলাফেরা করতে পারলেও এক যুগ থেকে বিছানায় পড়ে ছিলেন। সর্বশেষ মাসখানেক আগে তিনি নিজের খাট থেকে পড়ে যান। এতে তার ডান হাত ভেঙে যায়। পরে রাজিয়া বেগম তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সপ্তাহখানেক আগে হাবিবুর রহমানের ভাঙা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে তার ভাঙা হাতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় হাবিবুর রহমানের অপারেশন হয়নি।
বিষয়টি হাবিবুর রহমান পাশের বেডের একজনের সঙ্গে শেয়ার করেন। পরে ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ। এর পর তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের সদস্যরা গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে হাবিবুর রহমানকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করেন।
তবে হাবিবুর রহমান শুধু নিজের স্ত্রীর নাম বলতে পারছিলেন। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান। এর পর তারা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পর পর হাবিবুর রহমান যেদিন বাসা থেকে বের হন, তখন তার ঘরে ছিল চার সন্তান। এর মধ্যে ছোট ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৪০ দিন। সেই ছেলে এখন বড় হয়েছেন। বিয়েও করেছেন। তার দুই ছেলে। এ ছাড়া তার বড় ভাইদেরও ছেলে-মেয়ে আছে। সেই ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দাদার হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন। শুনেছেন হাবিবুর রহমানের নাতি-বউরাও। সেই শোনা থেকেই তারা সবাই কল্পনায় ছবি এঁকেছেন দাদার। তাই তো ভিডিও দেখেই হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ প্রথমে শনাক্ত করেন হাবিবুর রহমানকে। পরে তিনি ভিডিও পরিবারের সদস্যদের দেখান। এর পর পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন তাকে।
এ বিষয়ে হাবিবুর রহমানের আশ্রয়দাতা রাজিয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ বছর আগে এক মাজারে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আমার পরিবারের দেখা হয়। সেই সুবাদে তিনি আমাদের পরিচিত হয়ে ওঠেন। আমিও তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলে ডাকি। এর পর থেকেই আমি তার দেখাশোনা করে আসছি।
হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীতে আমার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। এর পর আমাদের পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। এর মধ্যে ২০০০ সালে আমার মা মারা যান। বাবা যখন হারিয়ে যান, তখন আমরা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে থাকতাম।
বাবাকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে জালাল উদ্দিন বলেন, এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে তাকে আমরা পেয়েছি। এখন পরিবারের সবাই খুশি।