Tech News

নিজস্ব ভার্চুয়াল মুদ্রা ‘লিব্রা’ আনতে যাচ্ছে ফেসবুক

Published

on

কোটি কোটি গ্রাহকের জন্য ভার্চুয়াল মুদ্রা ‘লিব্রা’ আনছে ফেসবুক। এর মধ্যে দিয়ে সোশাল নেটওয়ার্কিং ছাড়িয়ে ই-কমার্স ও বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন বাণিজ্যে পা রাখতে যাচ্ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।

মঙ্গলবার মার্ক জাকারবার্গ তার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে বিশ্বের ২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান সহযোগে লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ঘোষণা দেন, যার প্রধান দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনিভা শহরে।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা লিব্রা অ্যাসোসিয়েশনে এরই মধ্যে যোগ দিয়েছে মাস্টারকার্ড, ইবে, পেপাল, উবারের মতো নামি প্রতিষ্ঠানগুলো।

গঠনের ঘোষণা এই জুনে এলেও ২০২০ সালের প্রথম ভাগে এই ডিজিটাল মুদ্রা ছাড়তে যাচ্ছে ফেসবুক।

ফেসবুকের লিব্রা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেপালের সাবেক কর্মকর্তা ডেভিড মারকাস। তিনি রয়টার্সকে বলেন, স্বাধীনতা, ন্যায় এবং অর্থ, ঠিক এটাই আমরা এখানে এক করার চেষ্টা করছি।

মাস্টারকার্ডের ল্যামবার্ট বলেন, যদি এই প্রকল্প অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়ে, তবে হয়ত আমরা আর এটা চালু করব না।

নিজেদের সৃষ্টি এই মুদ্রা নিয়ে ফেসবুকের দাবি, কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই লিব্রা লেনদেনে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই তারা এই ব্যাংকিং জগতে প্রবেশ করে টাকা পাঠাতে পারবে।

ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ফেসবুক বলছে, এটা উন্নত এবং কম খরচে মুক্ত ব্যাংকিং সেবা।

নিরাপত্তা নিয়ে মার্ক জাকারবার্গ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, এর ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতি লেনদেনে সুরক্ষা দেবে গ্রাহককে। গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল ওয়ালেট ক্যালিব্রা আনবে ফেসবুক, যা থাকবে দক্ষ কর্মীদের তদারকিতে। লেনদেনে যে কোনো ধোঁকাবাজি থেকে গ্রাহককে সুরক্ষা দেবে তারা।

ফেসবুকের অন্য দুটি সেবা হোয়াটস আপ ও মেসেঞ্জারে আগামী বছর থেকে ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ ক্যালিব্রা চালু করবে। জাকারবার্গ বলেন, আমরা ধোঁকাবাজি থেকে সুরক্ষা দেব। যদি আপনি লিব্রা মুদ্রা হারান, আমরা তা ফেরত দেব। এটা একটি দুর্দান্ত যাত্রার কেবল শুরু।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের বরাতে গার্ডিয়ানের ভাষ্য, ফেসবুকের আর্থিক পড়তির এই সময়ে লিব্রা লাভের মুখ দেখাতে পারে প্রতিষ্ঠানটিকে।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকের তথ্যফাঁসে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঘটনায় খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক। তাদের অনেক বিজ্ঞাপনদাতা ক্ষতিপূরণ দাবি করার পাশাপাশি চুক্তিও বাতিল করেছে। বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতি নিয়ে ফেসবুকের নতুন বাণিজ্যিক পরিকল্পনাকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কীভাবে দেখছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীরা লাখ লাখ ডলার খুইয়েছেন হ্যাকারদের কবলে পড়ে। মানি লন্ডারিং, অবৈধ মাদক কেনাবেচায় ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একটি নীতিমালার আওতায় আনার প্রস্তাব উঠেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও। বাস্তব অস্তিত্ব না থাকা ক্রিপটোকারেন্সির চলে শুধু ইন্টারনেট জগতেই। ২০১৭ সাল থেকে এটি একটি উঠতি বাজারে পরিণত হয়েছে, যার মধ্যে বিটকয়েনের নাম এখন অনেকেরই জানা।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তৃতীয় পক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কে কার কাছে এই ডিজিটাল মুদ্রা দিচ্ছে বা নিচ্ছে, তা অন্য কেউ জানতে পারে না। আবার পরিচয় গোপন রেখেও এটা দিয়ে লেনদেন করা যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কোনো দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ না থাকায় অনেক দেশেই তা নিষিদ্ধ।

গার্ডিয়ান বলছে, এই ভার্চুয়াল ব্যাংকিং খাতে ফেসবুকের আগমনে এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ফেসবুকের নির্বাহী প্রধান মার্ক জাকারবার্গের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং, আবাসন, নগরায়ন বিষয়ক সিনেট কমিটি।

Trending

Exit mobile version