Highlights

ঢাকার ৫০ হাজার গ্রাহকের ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন

Published

on

নিউজ ডেস্ক:
ক্যাবল ও তারের ফাঁদমুক্ত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে বিপাকে পড়েছেন ৫০ হাজার ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট সংযোগ গ্রাহক। খবর বিবিসি বাংলার।

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সংযোগের তার অপসারণ করছে। এতে ওইসব এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকার তার কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রোভাইডারা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের এই সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন যারা অনলাইনে কাজ করছেন।

গুলিস্তানের বাসিন্দা শাহিন আহমেদ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে বাসা থেকেই অফিসের কাজ করে আসছেন। অফিসের বিভিন্ন কাজের জন্য তার নিরবিচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হলেও দুইদিন ধরে সংযোগ না থাকায় তার সব কাজ চালাতে হচ্ছে মোবাইল ডাটার মাধ্যমে। যা বেশ ব্যয়বহুল।

আবার তার দুটি সন্তানের অনলাইন স্কুলও বন্ধ হয়ে আছে, শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে। বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটির ওপরে কেবল টিভি, ইন্টারনেট সার্ভিস, টেলিফোনের তারের জঞ্জাল দেখা যায়। উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ পরিবাহী এই তারের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সেবা সংস্থার বিপুল পরিমাণ তার ঝুলে থাকে। এসব তার হেলে পড়ে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে সিটি কর্পোরেশন।

তাই ঝুঁকি এড়াতে এবং সেই সঙ্গে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গত বুধবার থেকে আজ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুটি ইউনিট তাদের আওতাভুক্ত কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে থাকা কেবল টিভি এবং ইন্টারনেটের তার অপসারণের কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

এ পর্যন্ত তারা ধানমন্ডি, জিগাতলা, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া এবং হাজারীবাগ এলাকায় এসব অবৈধ তারের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

হাজারীবাগে অভিযান চালাতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, “আইন অনুযায়ী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়রের নির্দেশে অবৈধ কেবল সংযোগের সরানোর কাজ চলছে। এসব তার শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে, মানুষের চলাফেরাতেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই এসব সংযোগে একটি শৃঙ্খলা আসুক। এজন্য সামনের দিনগুলোতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ২৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোন সার্ভিস প্রোভাইডারদের যদি সংযোগ স্থানান্তরের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কেবল সংযোগের কাজে তারা কারও স্থাপনা ব্যবহার করা যাবে না।

আইনের উপ-ধারা ২৮ (২) অনুসারে, যদি কোনও ব্যক্তি এই আইন লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। কিন্তু কোন অবকাঠামো তৈরি না করে বা বিকল্প ব্যবস্থা না করেই দেদারছে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নিন্দা জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

উন্নত বিশ্বে বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ইন্টারনেট বা স্যাটেলাইট সংযোগও রাস্তার নীচে লাইন টেনে বাড়িতে বা অফিসে সরবরাহ করা হয়। এজন্য তাদের কোন তার বাইরে থেকে দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও এমন কোন পরিপূর্ণ অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাটির নীচে এই নেটওয়ার্কিং এর ব্যবস্থা করলেও সেটার পরিধি সীমিত।

মূলত এটি একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। সেটা ব্যবহার করলেও বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার সময় ওই বিদ্যুতের খুঁটির ওপর দিয়েই তার টানতে হয়। কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, “আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন কিছুদূর গিয়ে এই বিদ্যুতের খুঁটির সামনে শেষ হচ্ছে। সেখান থেকে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেয়ার জন্য তারগুলো ওপর দিয়েই টানতে হচ্ছে। আর কোন উপায় নেই।”

এই সংযোগ মাটির দিয়ে টানার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।

“সরকার যদি আমাদের তার টানার জন্য মাটির নীচে ভায়াডাক্ট বা কমন একটা রাস্তা করে দেয় তাহলে আমরা সেটাই ব্যবহার করবো, যেটা মানুষের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাবে। প্রয়োজনে ভাড়াও দেব। বিল্ডিংগুলোতেও সেই সেবা যুক্ত করতে হবে। এখন কোন অবকাঠামো তৈরি না করে, যদি লাইন কেটে দেয়, আমরা তো রাস্তায় বসে যাব।” বলেন মি. পারভেজ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস গত মাসে কর্পোরেশনের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে অবৈধ দৃষ্টিকটু ও ঝুঁকিপূর্ণ কেবল অপসারণ করতে অভিযান পরিচালনার কথা জানান। সেই ধারাবাহিকতায় এই অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

কিন্তু অবকাঠামো না থাকার বিষয়টি এবং গ্রাহকদের দুর্ভোগ বিবেচনায় পুনরায় সংযোগ স্বাভাবিক করার বিষয়ে শিগগিরই দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে একটি বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু। তারা লিখিতভাবে এই অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানালেও কোন ফল মেলেনি।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ আগের চাইতে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এখন এই লাইন কেটে দিলে মানুষই দুর্ভোগে পড়বে। আমার মাটির নীচ দিয়েই তার টানবো। ভাড়াও দেব। কিন্তু সেই অবকাঠামো তো নেই। কোন বিকল্প না দিয়ে এভাবে তার কেটে দেয়া তো উচিত না।”

কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক পরিচালনার লাইসেন্স নিলেও সেটা পরিসরও সীমিত।

এ ব্যাপারে মি. আনু বলেন, “ঢাকাতে ১০ লাখ ভবন আছে। এখন এই ১০ লাখ ভবনের সামনে পর্যন্ত তার টানতে ১০ লাখ পয়েন্ট লাগবে। কিন্তু ওদের পয়েন্ট আছে ৫ হাজার। এখন এই ৫ হাজার পয়েন্ট থেকে লাখ লাখ বাসায় সংযোগ দিতে আমাকে মাটির ওপর দিয়েই তার টানতে হচ্ছে। ফ্যাসিলিটি না থাকলে আমাদের কী করার আছে। কোন সম্ভাব্যতা যাচাই না করে এই অভিযানের আমি মানে দেখি না।”

এদিকে বাজারে ইন্টারনেট তারের স্বল্পতা থাকায় দাম অনেক বেড়ে গেছে। চীন থেকে আমদানির সুযোগও নেই। এমন অবস্থায় মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে যদি নতুন করে সংযোগের অনুমতি মেলে, তাও সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মি. আনু।

কোন অবকাঠামো তৈরি না করেই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুশিয়ারি করেছেন তারা।এরআগে ঢাকাকে তারের জঞ্জাল মুক্ত করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনটাই কাজে আসেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version