Highlights

অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক, টেক এক্সপ্রেস:
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ থেকে সেবা নিতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ফিলাপাইন ও নেপাল। নিতে চেয়েছিল স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ। কিন্তু বিশ্বে ব্যান্ডউইথের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম পড়ে যায়। ফলে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ব্যান্ডইউথ যে দামে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, তা আর আগের দামে থাকেনি। এই কারণে বিদেশি বাজার বাদ দিয়ে দেশের ভেতরে বাজার বাড়ানোর কথা ভাবছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের প্রচুর স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথ অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। আমরা এখন অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছি।’ তিনি জানান, বিশ্বে এখন স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের চাহিদার চেয়ে সাপ্লাই বেশি। ফলে দাম অনেক কমে গেছে। ফিলিপাইন ও নেপালের অফার ছিল। দাম কমে যাওয়ায় তাদের আগ্রহে সাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশের ভেতরে যে সম্ভাব্য বাজার রয়েছে, তা খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। ড. শাজাহান মাহমুদের ধারণা, দেশের ভেতরে বাজার আরও বাড়ানো সম্ভব।

তিনি জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো চলছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। আরও কয়েকটি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাইপলাইনে রয়েছে সেবা নেওয়ার জন্য। এছাড়া সরকারি আরও কয়েটি প্রতিষ্ঠান সেবা নেবে বলে তিনি জানান। ড. শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘দেশের এমএম রেডিওগুলোকে আমরা (বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট) সেবা দিচ্ছি।’

এফএম রেডিওগুলোর সম্প্রচারে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি, এমএফ রেডিওগুলো সারাদেশের মানুষ শুনুক। সারাদেশের মানুষ যাতে শুনতে পারে, সেজন্য আমরা ব্যান্ডউইথ দিচ্ছি।’

তিনি জানান, দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের লিংক ব্যবহার করায় তাদের আর অন্যকোনও লিংক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। চ্যানেলগুলোর বিকল্প লিংক (বিকল্প স্যাটেলাইট সংযোগ) রাখার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইটই নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে সক্ষম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল ৫-৭ বছরের মধ্যে স্যাটেলাইট নির্মাণ খরচ (প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে দেরি হবে। দেশের বাইরে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিতে পারলে খরচ পরিকল্পনা মাফিক সময়ের মধ্যেই উঠে আসতো। এখন মনে হচ্ছে সময় বাড়বে।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এরমধ্যে সি ব্যান্ডে রয়েছে ১৪টি। এর অর্ধেক কেবল বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে কে-ইউ ব্যান্ডে রয়েছে ২৬টি ট্রান্সপন্ডার। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ বিক্রি হয়েছে। টেলিমেডিসিন, টেলিএডুকেশন সেবা, দুর্গম এলাকা, চরাঞ্চল, ছিটমহলসহ বিচ্ছিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা, ডাটা কানেক্টিভিটি, ভিডিও কনফারেন্স, ইত্যাদি সেবা চালু হলে স্যাটেলাইটের ব্যবহার বাড়বে বলে মনে করছে বিএসসিসিএল।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের লিংক ব্যবহার করে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সমুদ্রগামী নৌযান ও জাহাজগুলোও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের লিংক ব্যবহার করছে। এসব থেকে আয় করা শুরু করেছে বিএসসিসিএল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এক কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন টেলিভিশনের লাইসেন্স পেতে গেলে স্পেকট্রাম বরাদ্দ নেওয়ার শর্ত হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হবে। বর্তমানে লাইসেন্সের জন্য টেলিভিশন কোম্পানিগুলোকে যেতে হয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে। বিটিআরসি বরাদ্দ দেয় তরঙ্গ। এখন থেকে বিসিএসসিএল-এর কাছ থেকে তরঙ্গ বরাদ্দ নিতে হলে ছাড়পত্র নিতে হবে বিটিআরসির কাছ থেকে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় এটি। বিভিন্ন কারিগরি পরীক্ষা শেষে স্যাটেলাইটের নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া ওই বছরেরই ৯ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট :

ড. শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনের মেনিফেস্টোতেই এটা ছিল। ফলে চেষ্টা করবো এই মেয়াদেই তা মহাকাশে পাঠানোর।’ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট কী ধরনের হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা এখনও ঠিক করিনি। আমরা পরামর্শক নিয়োগ করতে যাচ্ছি। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরামর্শকই জানিয়ে দেবে আমাদের এখন কী ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন।’ আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version